আমের পুষ্টিগুনাগুণ ও উপকারিতা

Health Benefits আমের পুষ্টিগুনাগুণ ও উপকারিতা826 Views

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে আম শীর্ষে। ফলের রাজা আম শুধু স্বাদের জন্যই নয়, অসংখ্য পুষ্টিগুনাগুণের জন্যও বিখ্যাত। উষ্ণ আবহাওয়া এবং উর্বর মাটির জন্য বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া আম চাষের জন্য আদর্শ।

বাংলাদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা এবং দিনাজপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আমের উৎপাদন ব্যাপক। তবে বর্তমানে এটি প্রায় সারা বিশ্বেই চাষ করা হয়। খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এই ফলের বিভিন্ন জাত বা প্রকারভেদ রয়েছে, যা তাদের আকার, স্বাদ, রঙ ও ঘ্রানের ভিন্নতার ভিত্তিতে আলাদা করে চেনা যায়।

আমের কিছু উল্লেখযোগ্য জাত হল- হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি, হাড়িভাঙ্গা, আশ্বিনা, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, ক্ষীরসাপাতি, সুবর্ণরেখা, গৌড়মতি, মল্লিকা ইত্যাদি।

চলুন জেনে নিই আম খাওয়ার অজানা কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা।

আমের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ

১. কর্মক্ষমতা বাড়ায়

আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, ই, কে এবং ফোলেট। এতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফাইবারও রয়েছে। এই পুষ্টিগুলো দেহের সার্বিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আমে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। ভিটামিন সি শরীরের সাদা রক্তকণিকা উৎপাদন বাড়িয়ে ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে, যা শরীরকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং মৌসুমী রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

এছাড়া, আমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানগুলি কোষকে ক্ষতিকারক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে।

৩. দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়

আমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাছাড়া ভিটামিন এ চোখের কোণিকাতে থাকা রেটিনায় লাল এবং সবুজ আলো শোষণ করতে সহায়ক, যা দৃষ্টি পরিষ্কার রাখতে এবং চোখের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৪. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

আমে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে উজ্জ্বল ও তরতাজা রাখে। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকের মসৃণতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আমে বিটা-ক্যারোটিন ও পলিফেনল জাতীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয় এবং বয়সের ছাপ কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, আমের প্রাকৃতিক হাইড্রেটিং উপাদান ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং এটি গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে।

৫. হজমশক্তি উন্নত করে

আমে উপস্থিত এনজাইমগুলি প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এছাড়াও, আমে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। এটি পেট পরিষ্কার রাখে, এবং খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়া সহজ করে, ফলে বিপাকের গতিও বাড়ে। তাই নিয়মিত আম খাওয়া হজমের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

৬. হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি

পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হার্টের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হার্টের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

পটাশিয়াম রক্তনালীগুলোকে শিথিল করে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। অন্যদিকে ম্যাগনেসিয়াম হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখে এবং অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন প্রতিরোধ করে।

৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

আমে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে, যা মিষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এটি সঠিক পরিমাণে খেলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে না।

৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

পরিমিত পরিমাণে আম খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী হতে পারে। আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এতে থাকা ফাইবার রক্তের শর্করার স্তর ধীরে ধীরে বাড়তে দেয়, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফল হতে পারে। তবে, অতিরিক্ত খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

৯. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

আমে ভিটামিন বি৬ থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি সেরোটোনিন এবং ডোপামিন উৎপাদন বাড়িয়ে মেজাজ উন্নত করতে সহায়ক।

১০. প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন কমানো

আমে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এটি আর্থ্রাইটিস ও অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের উপশমে কার্যকর।

এই সব উপকারিতার জন্য আমকে একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে আম খেলে শরীর সুস্থ ও সক্রিয় থাকে।

১১. রক্ত শুদ্ধিকরণ

আমে ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ এর উপস্থিতি রক্তকে শুদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

১২. ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস

আমের মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান শরীরকে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। বিশেষত পাকা আমে রয়েছে বেটা-ক্যারোটিন, কুইরসেটিন, ফাইসেটিন, এবং অন্যান্য শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো ক্যান্সার কোষের গঠন ও বৃদ্ধি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমের পুষ্টিগুণ কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, এমনকি লিউকেমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত পরিমাণে আম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

সতর্কতাঃ

আম সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল হলেও, ক্ষেত্র বিশেষে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নির্দিষ্ট কিছু রোগের উপস্থিতিতে অথবা মাত্রাতিরিক্ত আম খাওয়ার সম্ভাব্য অপকারিতা:

অ্যাসিডিটি ও পেটের সমস্যা: আমে উচ্চমাত্রায় চিনির উপস্থিতি থাকে, যার কারনে অতিরিক্ত আম খেলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস এর জন্য পেটব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, অতি পরিমাণে আম খেলে পেট ভারি হতে পারে এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি: আমে অনেক শর্করা এবং ক্যালোরি থাকে, তাই যদি কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে আম খায়, তাহলে এটি ওজন বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

অ্যালার্জি: কিছু মানুষের আম খাওয়ার পর অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন ত্বকে চুলকানি বা ফুলে যাওয়া। এর ফলে তাদের জন্য আম খাওয়া উচিত নয়।

গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI): আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) তুলনামূলকভাবে বেশি, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত আম খাওয়া খুব ভালো নয়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

রক্তচাপ বৃদ্ধি: অতিরিক্ত আম খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি হতে পারে, বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।

খাদ্যতালিকায় আমের ব্যবহার

খাদ্যতালিকায় আমের ব্যবহার আজকাল অনেক বেশি লক্ষণীয়। এখন এটি শুধু ফলমূলের সালাদ, স্মুদি বা জুসে ব্যবহার করা হয় না, বরং সালাদ, পুডিং বা অন্যান্য ডেজার্ট আইটেমেও এর উপস্থিতি দেখা যায়। আমাদের দেশে আমের আচারও জনপ্রিয়। গরমের দিনে কাঁচা অথবা পাকা আমের শরবতও হতে পারে একটি রিফ্রেশিং বিকল্প।

জারসহ আমচুরের আচার (Amchur Pickle) - The Eastern Pickle Company

শেষ কথা

আর গরমের দিনগুলোতে আম যেন এক অনন্য তৃপ্তির অনুভূতি দেয়। পাকা আমের মিষ্টি স্বাদ এবং কাঁচা আমের টকটক স্বাদ, সবই আমাদের মৌসুমী ঋতুর একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।

ইস্টার্ন পিকেল কোম্পানির ১০০% প্রিজারভেটিভ মুক্ত আমচুরের আচার এবং আমসত্ত্ব মায়ের হাতের সেই পুরনো স্বাদকে আবার মনে করিয়ে দেয় এবং খাদ্যাভ্যাসে আনে বিচিত্রতা।

  • Tags:

Share - Facebook

Recent Posts

Calendar 14861 Views

সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি - ২০২৫

The Eastern Pickle Company নিয়ে এসেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ অনুমোদিত ২০২৫ সালের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি। পাশাপাশি, রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া দেওয়া হয়েছে। ইফতারকে আরও সুস্বাদু করতে Eastern Pickle-এর ডিপিং সস, আঁচার, ঘি ও ঝালমুড়ির মসলা ট্রাই করুন!

Health Benefits 995 Views

জলপাই এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

জলপাই একটি পুষ্টিকর ফল, যা পরিপাকতন্ত্র, হৃদরোগ, ক্যান্সার, ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী। এটি হাড়ের ক্ষয় রোধ, লৌহের অভাব পূরণ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।